Jasimuddin

সেলাই করিছে মেয়ে,

এক পাশ হইতে দেখিতেছি তারে, বাঁকাধনু নাসিকায়ভূরু-তীর দুটি সদা উদ্যত বধিতে কে অজানায়।আঁখি সরোবর স্তব্ধ নিঝুম, মৃদু পলকের ঘায়ে,ঢেউ-হংসীরা বিরাম লভিছে কাজল রেখায় গাঁয়ে।অধরখানিতে যুগল ঠোঁটের রঙিন বাঁধন খুলি,মাঝে মাঝে মৃদু হাসিটে ফুটিছে সুমধুর সুখে দুলি।খোঁপার ফিতার কুসুম বাঁধনে গোলাপ মেলিছে দল,বেনীর ভ্রমর সেথা জড় হয়ে রয়েছে অচঞ্চল।এক হাতে ধরি সরু সুইটিরে সেলাই করিছে বসে,আকাশ…

কানা দেয়ারে, তুই না আমার ভাই,

— মেঘরাজার গানচৈত্র গেল ভীষণ খরায়, বোশেখ রোদে ফাটে,এক ফোঁটা জল মেঘ চোঁয়ায়ে নামল না গাঁর বাটে |ডোলের বেছন ডোলে চাষীর, বয় না গরু হালে,লাঙল জোয়াল ধূলায় লুটায় মরচা ধরে ফালে |কাঠ-ফাটা রোদ মাঠ বাটা বাট আগুন লয়ে খেলে,বাউকুড়াণী উড়ছে তারি ঘূর্ণী ধূলী মেলে |মাঠখানি আজ শূণ্য খাঁ খাঁ, পথ যেতে দম আঁটে,জন্-মানবের নাইক সাড়া…

শেষ রাত্রের পান্ডুর চাঁদ নামিছে চক্রবালে,

অলস চরণে চলিতে চলিতে ঢলিয়া ঢলিয়া পড়ে,শিথিল শ্রানি- চুমিছে তাহার সারাটি অঙ্গ ধরে!উতল কেশেরে খেলা দিতে শেষ উতল রাতের বায়ু:ঘুমাতে ঘুমাতে কাঁপিয়া উঠিছে স্মরিয়া রাতের আয়ু।রজনী- গন্ধা রাতের রূপসী ঝুমিছে শ্রানি-ভরে,অঙ্গ হইতে ঝরিছে কুসুম একটি একটি করে।শিয়রে চাঁদের দীপটি ঝুমিয়া হইয়া আসিছে ম্লান,রাত-বিহগীর কন্ঠে এখন মৃদু হোয়ে এল গান।পূর্ব তোরণে আসিছে রুপসী রঙিন উষসী-বালা,হসে- লইয়া…

তাহারে কহিনু, সুন্দর মেয়ে! তোমারে কবিতা করি,

সে কহিল মোরে, ‘কবিতা লিখিয়া তোমার হইবে নাম,দেশে দেশে তব হবে সুখ্যাতি, আমি কিবা পাইলাম ?’স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিনু কি দিব জবাব আর,সুখ্যাতি তরে যে লেখে কবিতা, কবিতা হয় না তার।হৃদয়ের ফুল আপনি যে ফোটে কথার কলিকা ভরি,ইচ্ছা করিলে পারিনে ফোটাতে অনেক চেষ্টা করি।অনেক ব্যথার অনেক সহার, অতল গভীর হতে,কবিতার ফুল ভাসিয়া যে ওঠে হৃদয়…

ও তুই ঘরে রইতে দিলি না আমারে |

ঘরেতে রূপার মন টেকে না যে, তরলা বাঁশীর পারা,কোন বাতাসেতে ভেসে যেতে চায় হইয়া আপন হারা |কে যেন তার মনের তরীরে ভাটির করুণ তানে,ভাটিয়াল সোঁতে ভাসাইয়া নেয় কোন্ সে ভাটার পানে |সেই চিরকেলে গান আজও গাহে, সুরখানি তার ধরি,বিগানা গাঁয়ের বিরহিয়া মেয়ে আসে যেন তরি!আপনার গানে আপনার প্রাণ ছিঁড়িয়া যাইতে চায়,তবু সেই ব্যথা ভাল লাগে…

গান-বারমাসির সুর

অভাগী অবলার কথা রাইখ মনে করে।তোমার দেশেতে বন্ধু। ফুটবে কদম কলি,আমার দেশে কাজল্যা মেঘা নামবে ঢলি ঢলি।সেই না কাজলা মেঘা ঝরে রয়া রয়া,বিজলীর আগুন তাতে পড়ে খয়া খয়া।সেই আগুন-লাগিবো আমার বুকের বসনে,সেই আগুন লাগিবো আমার বে-ঘুম শয়নে।আপন দেশে যাওরে বন্ধু। আপনার ঘর,দেখিবা আপন জন পরবাস-অন্তর।মায়েতে মুছাবে মুখ বুকের বসন দিয়া,বইনে ত করবো বাতাস আবের পাঙ্খা…

ও তুই যারে আঘাত হানলিরে মনে

ও তুই যারে আঘাত হানলিরে মনে সেজন কি তোর পর,সে ত তোরি তরে কেন্দে কেন্দে বেড়ায় দেশান্তর;রে বন্ধু!তোরি তরে সাজাইলাম বন-ফুলের ঘর,রে বন্ধু মন-ফুলের ঘর,ও তুই ভোমর হয়া হানলি কাঁটা সেই না ফুলের পর;রে বন্ধু!এক ঘরেতে লাগলে আগুন পোড়ে অনেক ঘর,মনের আগুন মনই পোড়ায়-নাই কোন দোসর;রে বন্ধু!আগে যদি জানতামরে তোর রূপে আগুর জ্বলে,আমি রূপ থুইয়া…

হিমালয় হতে আসিলে নামিয়া তুষার বসন ত্যাজি,

হে গিরি দুহিতা তোমার নয়নে অলকার মেঘগুলি,প্রতি সন্ধ্যায় পরাইয়া যেত মায়া-কাজলের তুলি।তুহিন তুষারে অঙ্গ মাজিতে দুগ্ধধবল কায়,রবির কিরণ পিছলি পিছলি লুটাত হিমানী বায়!রাঙা মাটি পথে চলিতে চলিতে পথ যেন মমতায়,আলতা রেকায় রঙিন হইয়া জড়াইত দুটি পায়।অলকে তোমার পাহাড়ী পবন ফুলের দেউল লুটি,গন্ধের বাসা রচনা করিত সারা রাত ছুটি ছুটি।গহিন গুহার কুহরে কুহরে কলকল্লোলে ঘুরি,ঝরণা তোমার…

লাজ-রক্ত হইল কন্যার পরথম যৌবন

আশ্বিনেতে ঝড় হাঁকিল, বাও ডাকিল জোরে,গ্রামভরা-ভর ছুটল ঝপট লট্ পটা সব করে |রূপার বাড়ির রুশাই-ঘরের ছুটল চালের ছানি,গোয়াল ঘরের খাম থুয়ে তার চাল যে নিল টানি |ওগাঁর বাঁশ দশটা টাকায়, সে-গাঁয় টাকায় তেরো,মধ্যে আছে জলীর বিল কিইবা তাহে গেরো |বাঁশ কাটিতে চলল রূপাই কোঁচায় বেঁধে চিঁড়া,দুপুর বেলায় খায় যেন সে—মায় দিয়াছে কিরা |মাজায় গোঁজা রাম-কাটারী…

বিদ্যাশেতে রইলা মোর বন্ধুরে |

উইড়া যাইয়া দিতাম দেখা ;আমি উইড়া পড়তাম সোনা বন্ধুর দেশেরে |আমরা ত অবলা নারী,তরুতলে বাসা বান্ধিরে ;আমার বদন চুয়ায়া পড়ে ঘামরে |বন্ধুর বাড়ী গঙ্গার পারগেলে না আসিবা আর ;আমার না জান বন্ধু, না জানে সাঁতাররে |বন্ধু যদি আমার হওউইড়া আইসা দেখা দাওতুমি দাও দেখা জুড়াক পরাণরে |. — রাখালী গানএকটি বছর হইয়াছে সেই রূপাই গিয়াছে…