Michael Madhusudan Dutta

‘এতক্ষণে’ -অরিন্দম কহিলা বিষাদে

রক্ষঃপুরে ! হায়, তাত, উচিত কি তবএকাজ, নিকষা সতী তোমার জননী,সহোদর রক্ষশ্রেষ্ঠ ? -শূলী-শম্ভূনিভকুম্ভকর্ণ ? ভ্রাতৃপুত্র বাসব বিজয়ী ?নিজগৃহপথ, তাত, দেখাও তস্করে ?চণ্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে ?কিন্তু নাহি গঞ্জি তোমা, গুরুজন তুমিপিতৃতুল্য | ছাড় দ্বার, যাব অস্ত্রাগারে,পাঠাইব রামানুজে শমন-ভবনে,লঙ্কার কলঙ্ক আজি ভঞ্জিব আহবে |’উত্তরিলা বিভীষণ;-‘বৃথা এ সাধনা,ধীমান্ ! রাঘবদাস আমি ; কি প্রকারেতাঁহার বিপক্ষ…

রসাল ও স্বর্ণলতিকা

রসাল কহিল উচ্চে স্বর্ণলতিকারে;-শুন মোর কথা, ধনি, নিন্দ বিধাতারে।নিদারুণ তিনি অতি;নাহি দয়া তব প্রতি;তেঁই ক্ষুদ্র-কায়া করি সৃজিলা তোমারে।মলয় বহিলে, হায়,নতশিরা তুমি তায়,মধুকর- ভরে তুমি পড় লো ঢলিয়া;হিমাদ্রি সদৃশ আমি,বন-বৃক্ষ-কুল-স্বামী,মেঘলোকে উঠ শির আকাশ ভেদিয়া!দূরে রাখি গাভী-দলে,রাখাল আমার তলেবিরাম লভয়ে অনুক্ষণ,-শুন, ধনি, রাজ-কাজ দরিদ্র পালন!আমার প্রসাদ ভুঞ্জে পথ-গামী জন।কেহ অন্ন রাঁধি খায়কেহ পড়ি নিদ্রা যাযএ রাজ চরণে।মধু-মাখা…

সুবর্ণ-দেউল আমি দেখিনু স্বপনে

বড় অপ্রশস্ত সিঁড়ি গড়া মায়া-বলে,বহুবিধ রোধে রুদ্ধ উর্দ্ধগামী জনে!তবুও উঠিতে তথা– সে দুর্গম স্থলে–করিছে কঠোর চেষ্টা কষ্ট সহি মনেবহু প্রাণী। বহু প্রাণী কাঁদিছে বিকেলে,না পারি লভিতে যত্নে সে রত্ন-ভবনে।ব্যথিল হৃদয় মোর দেখি তা সবারে।–শিয়রে দাঁড়ায়ে পরে কহিলা ভারতী,মৃদু হাসি; “ওরে বাছা, না দিলে শকতিআমি, ও দেউলে কার সাধ্য উঠিবারে?যশের মন্দির ওই; ওথা যার গতি,অশক্ত আপনি…

যথাবিধি বন্দি কবি, আনন্দে আসরে,

সেই আমি, ডুবি পূর্বে ভারত-সাগরে,তুলিল যে তিলোত্তমা-মুকুতা যৌবনে;–কবি-গুরু বাল্মীকির প্রসাদে তত্žপরে,গম্ভীরে বাজায়ে বীণা, গাইল, কেমনে,নাশিলা সুমিত্রা-পুত্র, লঙ্কার সমরে,দেব-দৈত্য-নরাতঙ্ক– রক্ষেন্দ্র-নন্দনে;কল্পনা দূতীর সাথে ভ্রমি ব্রজ-ধামেশুনিল যে গোপিনীর হাহাকার ধ্বনি,(বিরহে বিহ্বলা বালা হারা হয়ে শ্যামে;)–বিরহ-লেখন পরে লিখিল লেখনীযার, বীর জায়া-পক্ষে বীর পতি-গ্রামে,সেই আমি, শুন, যত গৌড়-চূড়ামণি!–ইতালি, বিখ্যাত দেশ, কাব্যের কানন,বহুবিধ পিক যথা গায় মধুস্বরে,সঙ্গীত-সুধার রস করি বরিষণ,বাসন্ত আমোদে…

[যত্কালে রামচন্দ্র পঞ্চবটি-বনে বাস করেন, লঙ্কাধিপতি রাবণের ভগিনী সূর্পনখারামানুজের মোহন-রূপে মুগ্ধা হইয়া, তাঁহাকে এই নিম্নলিখিত পত্রিকাখানি লিখিয়াছিলেন | কবিগুরু বাল্মীকি রাজেন্দ্র রাবণের পরিবারবর্গকেপ্রায়ই বীভত্স রস দিসা বর্ণন করিয়া গিয়াছেন ; কিন্তু এ স্থলে সে রসের লেশ মাত্রও নাই | অতএব পাঠকবর্গ সেই বাল্মীকিবর্ণিতা বিকটা সূর্পনখাকে স্মরণপথ হইতে দূরীকৃতা করিবেন | ]

বিভূতি-ভূষিত অঙ্গ? কি কৌতুকে, কহ,বৈশ্বানর, লুকাইছ ভস্মের মাঝারে?মেঘের আড়ালে যেন পূর্ণশশী আজি?ফাটে বুক জটাজুট হেরি তব শিরে,মঞ্জুকেশি! স্বর্ণশয্যা ত্যজি জাগি আমিবিরাগে, যখন ভাবি, নিত্য নিশাযোগেশয়ন, বারাঙ্গ তব, হায় রে, ভূতলে!উপাদেয় রাজভোগ যোগাইলে দাসী,কাঁদি ফিরাইয়া মুখ, পড়ে যাবে মনেতোমার আহার নিত্য ফল মূল, বলি!সুবর্ণ-মন্দিরে পশি নিরানন্দ গতি,কেন না–নিবাস তব বঞ্জুল মঞ্জুলে!হে সুন্দর, শীঘ্র আসি কহ মোরে…

মহানন্দে সুন্দ উপসুন্দাসুর বলী

মধুর সম্ভাষে, এবে, সিংহাসন ত্যজি,উঠিলা,–কুসুমবনে ভ্রমণ প্রয়াসে,একপ্রাণ দুই ভাই–বাগর্থ যেমতি!‘হে দানব’ আরম্ভিলা নিকুম্ভ-কুমারসুন্দ,–‘বীরদলশ্রেষ্ঠ, অমরমর্দ্দন,যার বাহু-পরাক্রমে লভিয়াছি আমিত্রিদিব-বিভব ; শুন, হে সুরারি রথী-ব্যূহ, যার যাহা ইচ্ছা, সেই তাহা কর |চিরবাদী রিপু এবে জিনিয়া বিবাদেঘোরতর পরিশ্রমে, আরাম সাধনেমন রত কর সবে |’ উল্লাসে দনুজ,শুনি দনুজেন্দ্র-বাণী, অমনি নাদিল |সে ভৈরব-রবে ভীত আকাশ-সম্ভবাপ্রতিধ্বনি পলাইলা রড়ে ; মূর্ছা পায়েখেচর, ভূচর…

ইতালি, বিখ্যাত দেশ, কাব্যের কানন,

সঙ্গীত‐সুধার রস করি বরিষণ,বাসন্ত আমোদে আমোদ মন পূরি নিরন্তরে;—সে দেশে জনম পূর্বে করিলা গ্রহণফ্রাঞ্চিস্কো পেতরাকা কবি; বাক্‌‍দেবীর বরেবড়ই যশস্বী সাধু, কবি‐কুল‐ধন,রসনা অমৃতে সিক্ত, স্বর্ণ বীণা করে।কাব্যের খনিতে পেয়ে এই ক্ষুদ্র মণি,স্বমন্দিরে প্রদানিলা বাণীর চরণেকবীন্দ্র: প্রসন্নভাবে গ্রহিলা জননী(মনোনীত বর দিয়া) এ উপকরণে।ভারতে ভারতী‐পদ উপযুক্ত গণি,উপহাররূপে আজি অরপি রতনে॥[চতুর্দশপদী কবিতাবলী]

কমলে কামিনী আমি হেরিনু স্বপনে

(নিশীথে চন্দ্রিমা যথা সরসীর জলেমনোহরা।) বাম করে সাপটি হেলনেগজেশে, গ্রাসিছে তারে উগরি সঘনেগুঞ্জরিছে অলিপুঞ্জ অন্ধ পরিমলে,বহিছে দহের বারি মৃদু কলকলে!—কার না ভোলে রে মনঃ, এহেন ছলনে!কবিতা‐পঙ্কজ‐রবি, শ্রীকবিকঙ্কণ,ধন্য তুমি বঙ্গভূমে! যশঃ‐সুধাদানেঅমর করিলা তোমা অমরকারিণীবাগ্‌‍দেবী! ভোগিলা দুখ জীবনে, ব্রাহ্মণ,এবে কে না পূজে তোমা, মজি তব গানে?—বঙ্গ‐হৃদ‐হ্রদে চণ্ডী কমলে কামিনী॥

বড়ই নিষ্ঠুর আমি ভাবি তারে মনে,

মিত্রাক্ষররূপ বেড়ি ! কত ব্যথা লাগেপর’ যবে এ নিগড় কোমল চরণে-স্মরিলে হৃদয় মোর জ্বলি উঠে রাগেছিল না কি ভাবধন, কহ, লো ললনে,মনের ভাণ্ডারে তার, যে মিথ্যা সোহাগেভুলাতে তোমারে দিল এ তুচ্ছ ভূষণে ?কি কাজ রঞ্জনে রাঙি কমলের দলে ?নিজরূপে শশিকলা উজ্জ্বল আকাশে !কি কাজ পবিত্রি’ মন্ত্রে জাহ্নবীর জলে ?কি কাজ সুগন্ধ ঢালি পারিজাত-বাসে ?প্রকৃত কবিতা…

দাঁড়াও, পথিক-বর, জন্ম যদি তব

( জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতিবিরাম ) মহীর পদে মহানিদ্রাবৃতদত্তকুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন!যশোরে সাগরদাঁড়ী কবতক্ষ-তীরেজন্মভূমি, জন্মদাতা দত্ত মহামতিরাজনারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী!